বিশ্বাসঘাতক
-শিলাবৃষ্টি
কোনোদিন তার মনোভাব এরকম হবে নিজেই ভাবতে পারেনি মীরা। কারো খেলার পুতুল সে নয়, সেটাই এবার বোঝাবে। শুধু পায়ে ধরতে বাকি রেখেছিল সে, কিন্তু মিথ্যের পর মিথ্যে দিয়ে সাজানো নাটকে অভ্যস্ত তপন তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে জীবন থেকে। মীরা খুব বোকা। তার বন্ধুরা তাকে অনেক বাধা দিয়েছিল, কিন্তু কারো কথাই তখন কানে দেয়নি মীরা। প্রেমের জোয়ারে সে তখন ভেসে গেছে। ফেরার কথা ভাবতেই পারেনা। তপন তাকে কথা দিয়েছিল বিয়ে করবে। তার ডিভোর্সের কেস চলছে, তাই কেস মিটে গেলেই.. এখন হাসি পায় ভাবলে।
এরা একজনকে নিয়ে বেশিদিন খুশি থাকতে পারেনা, এরা বদল চায়। সম্পর্কের শেষ ধাপে দাঁড়িয়ে মীরা পাগলের মত চেষ্টা করেছে তপনকে ফেরাতে। একটি বার দেখা করতে চেয়েছে। কিন্ত কোনো ফল হয়নি। তার এখন সময়ের বড় অভাব। যে সারাটাদিন মীরার জন্য ছুটে বেড়াতো, সে আজ দশ মিনিটও সময় দিতে নারাজ। সরু বিনি সুতোয় যে সম্পর্কটা আটকে ছিল, তাও একদিন ছিঁড়ে গেল! অনেক রাত ঘুমোতে পারেনি মীরা। বন্ধুরা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আনন্দ দিতে চেষ্টা করেছে কিন্তু মীরা অশান্ত মন নিয়ে হেসেছে, কেঁদেছে। অভিনয় করে গেছে। তার ভালোবাসায় কেউ ছুরি মেরে পালিয়ে গেছে, তাই শাস্তি তাকে পেতেই হবে। তপনের অভিনয় মীরা ধরে ফেলেছে। বদলা নিতে বদলে ফেলে নিজেকে মীরা। তিন বন্ধু মিলে অনেক সাবধানে পা ফেলতে শুরু করে। মীরা আর দুজনে ফেক একাউন্ট বানায়। আর কিছুদিন আগে পরে তিনজনেরই টোপ গেলে তপন, ব্যাস শুরু হয়ে যায় খেলা।
বেশ কিছুদিন চলতে থাকে প্রেম প্রেম খেলা। প্রায় সাত আট মাস কেটে গেছে।
তপন দেখা করার জন্য মরিয়া, কিন্তু এরা তিনজনও নানান অজুহাতে দেরি করতে থাকে। মানে মাছকে খেলিয়ে টোপ গেলানো আর কি!
অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ!
নেহা দিন এবং সময় ঠিক করে দিয়েছিল। ওইদিন সন্ধ্যা ছ’টায় ইছাপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে একটা নির্দিষ্ট বেঞ্চে নেহা খুব সুন্দর সেজেগুজে বসলো। আর একটু আড়ালে থাকলো বিপাশা। তপনের বৌকে নিয়ে আর একপাশে গা ঢাকা দিল মীরা। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে তপনের স্ত্রী এর সাথে যোগাযোগ করতে কোনো বেগ পেতে হয়নি। তপন নির্দিষ্ট সময়ের কিছু আগেই হাজির হলো। নেহার সাথে আলাপ যখন প্রলাপে এগিয়ে যাচ্ছে, নাট্যমঞ্চে অবতীর্ণ হলো বিপাশা। সে অন্য ছবিতে তপনের বান্ধবী। তাই তাকে চিনতেও পারলোনা তপন। দূর থেকে মীরা সবটাই ওয়াচ করছিল তপনের স্ত্রী মানে বরুণাকে নিয়ে। বরুণার বিস্ময়ের সীমা ছিলনা। মীরা আগে থেকেই তিন বান্ধবীর সাথে তপনের গোপন মেসেজের স্ক্রিনশট পাঠিয়ে রেখেছিল বরুণাকে। এবার সামনে এলো মীরা আর বরুণা। ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো তপন। চারজন ঘিরে ধরলো তাকে। পালানোর পথ নেই আর। মীরা বলতে থাকে- “আজ আমি পেরেছি তপন, তোমার খেলা আর কতজনের সাথে চলছে জানিনা। তবে আশা করি আমি তোমাকে শাস্তি দিতে পেরেছি। এবার তোমার স্ত্রী কি করবে জানি না, তবে ঈশ্বর তোমাকে আরো বড় কোনো শাস্তি দেবেন দেখে নিও।” কথাগুলো বলেই পাগলের মতো হাসতে শুরু করে মীরা।তারপরেই কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। বরুণা ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধু বলে -“এই জন্যই অফিস থেকে ফিরতে তোমার এত দেরি হয়? আর কত জনের সাথে ডেটিং করো?তালিকাটা খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। একবুক ভালোবাসা নিয়ে তোমার সাথে ঘর বেঁধেছিলাম তপন। আজ সে ঘর ভেঙে পড়লো। মীরাকে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখিয়েছিলে। অনেক মনের জোর নিয়ে মীরা আজকের দিনটা আমায় দেখালো… বাই তপন। আর এক ছাদের তলায় আমরা স্বামী স্ত্রীর অভিনয় করবো না। ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেবো, অপেক্ষায় থেকো।”
খুব ভালো